সম্মানীত সদস্য-সদস্যা ও শুভাকাংখীবৃন্দ, আমার সমবায়ী প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনাদের সকলের প্রত্যক্ষভোটে ২০১২ খ্রীষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি, লোন কমিটি ও ইন্টারন্যাল সুপারভিশন এন্ড অডিট কমিটির সদস্য-সদস্যাবৃন্দ জয়লাভ করে সোসাইটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। আমাদের কাছে বিগত ব্যবস্থাপনা পরিষদ ৬ ডিসেম্বর ২০১২ খ্রীষ্টাব্দে দায়িত্ব হস্তান্তর করে। এর পর থেকেই আমরা সোসাইটির উন্নয়ন ও সার্বিক মঙ্গলের জন্যে আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। বিশেষ করে সোসাইটির সদস্য-সদস্যাদের স্বার্থ সংরক্ষণে আমরা বিশেষ নজর দেই। সোসাইটিতে আমাদের আছে প্রচুর সম্পদ ও সম্ভবনার অনেক সুযোগ। তাকে কাজে লাগিয়ে সোসাইটিকে একটি আদর্শ ও উন্নত পর্যায়ে উপনীত করতে বর্তমান কমিটি বিশেষ যতœবান। বিগত দিনে অনেক কিছুই আছে যা সোসাইটির সদস্য-সদস্যাদের স্বার্থ পরিপন্থি হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রমাণীত হয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থে বলিকৃত হয়েছে সোসাইটির সাধারণ সদস্য-সদস্যাদের বৃহত্তর স্বার্থ। এসকল দিকে আমরা প্রথম থেকেই নজর দেই এবং সোসাইটির সম্মানীত সদস্য-সদস্যাদের স্বার্থ সুরক্ষায় মনোযোগী হই। ফলে আমাদের অনেক কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
আপনারা জানেন যে, নির্বাচনের পূর্বে আমি ও আমার পরিষদের কর্মকর্তাগণ আপনদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, আমরা নিজেরা কোন অন্যায় করবো না এবং অপরকেও অন্যায় করার সুযোগ দেব না। এরই ধারাবাহিকতায় সদস্য-সদস্যাদের নানা অভিযোগ এবং সোসাইটির নথিপত্রে প্রাপ্ত নানা অনিয়ম আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। আমরা বিশেষ করে সোসাইটির সম্পদ রক্ষায় অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করি। তাই বিগতদিনের আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানক নানা অনাচারের প্রতিবিধানের জন্যে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিষদ সমবায় আইন ও উপবিধি অনুসারে এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিষয়টি আপনাদের দৃষ্টিতেও এসেছে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি আশা করি আপনারা সাদাকে সাদা বলবেন এবং কালোকে কালোই বলবেন। আর আপনাদের সাথে নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।
আপনারা জানেন যে, ইতিহাসের সত্যতা আমাদের স্বীকার করতে হয়। তাই আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পরেই সোসাইটির নিবেদিত প্রাণ সেবকগণ যাদের হাতে এই সোসাইটির সৃষ্টি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্যে একটি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। ২০১৩ খ্রীষ্টাব্দের ২৮ সেপ্টেম্বর এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডিঃ রোজারিও সিএসসি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেদিনের তাঁর বক্তব্যে তিনি সোসাইটির কাঠামোগত ত্রুটির প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি নিজেও সোসাইটির যাবতীয় বিষয়ে সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন এবং সেজন্যেই তিনি সোসাইটির একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সতর্কবার্তা প্রদান করেছিলেন। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেও প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ তাদের সুবর্ণ শ্রমের ফসল হিসেবেই হাউজিং সোসাইটি আজ মহাবৃক্ষে পরিণত হয়েছে।
আপনারা জানেন যে, আমি সর্বদাই সততার পক্ষে থেকে কাজ করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছিলাম। আমার সাথে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যগণও একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তাই যখন আমদের কাছে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে প্রকাশিত হলো যে, বিগত কমিটি সোসাইটির বিপুল অর্থ আত্মসাত করে রাতারাতি কয়েকজন ব্যক্তি ধনকূবের হয়েছেন তখন তাদের ডেকে এনে প্রতিটি প্রমাণ তাদের সামনে উপস্থাপন করি। তারা প্রথমদিকে মৌখিকভাবে সকল বিষয়ে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তীতে তারা সম্পূর্ণভাবে তাদের দোষ অস্বীকার করে। এর পরেও আমরা সমবায় থেকে দুটি, ব্যবস্থাপনা কমিটির পক্ষ থেকে একটি এবং সম্মানীত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য-সদস্যাদের নিয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে সমস্ত বিষয়ে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন কওে বিষয়গুলি সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু যেোদর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের অব্যাহত অসহযোগিতা এবং পরবর্তীতে তাদের দায়েরকৃত নানা মামলার শিকার হয়ে আমরা ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সম্মানীত উপদেষ্টা পরিষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে সোসাইটির টাকা আদায়ে একাধিক মামলা করতে বাধ্য হই। ফলে তারা চার জন মি. হ্যারিসন দালবৎ (বহিস্কৃত ট্রেজারার), মি. ডমিঙ্গ ফ্রান্সিস গমেজ (রবিন) (বহিস্কৃত সেক্রেটারি), মি. এলয়সিয়াস মিলন খান সাবেক চেয়ারম্যান ও মি. মার্টিন সিলভেস্টার পেরেরা সাবেক ম্যানেজার গ্রেফতার হন এবং হাজতবাস করেন। তাদের স্ত্রীগণের একান্ত অনুরোধ, নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে দোষ স্বীকার করে টাকা পরিশোধের অঙ্গীকারনামা প্রদান ও মহামান্য আর্চবিশপ মহোদয়ের নির্দেশিত একটি সমাধান কমিটির অনুরোধে আমরা তাদের জামিন লাভের পক্ষে সম্মতি প্রদান করি। বর্তমানে সমস্ত মামলা চালু আছে এবং সমাধান কমিটিও তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই তারা ২৮০০০/- (আটাশ হাজার) টাকা সোসাইটির তহবিলে জমা দিয়েছেন যা তাদের অপরাধ সংগঠনের একটি বড় প্রমাণ। তবে পরিতাপের বিষয় এই যে, সমাধান কমিটির সাথে তারা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান না করে উল্টো পথে হাটতে শুরু করেছেন। সোসাইটির কাজ কর্ম সবই স্বাভাবিক গতিতে চলছে। আমাদের বিনিয়োগকারীগণ বিভিন্ন খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করেছেন। কেবল তাই নয় আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে উন্নয়নের কাজ পূর্ণউদ্যমে চলছে এবং এলাটিগণ একাজের প্রশংসা করেছেন। আমাদের সময়ে আমরা ইতোমধ্যেই কাফরুলের সমস্ত ফ্ল্যাট বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি রাজাবাজারে ৬টি ফ্ল্যাট সবগুলোই বিক্রয় হয়ে গেছে, দক্ষিণখানে ২৫টি ফ্ল্যাটের বেশ কতগুলি ইতোমধ্যেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাগাড়ে নির্মিত ফ্ল্যাট প্রকল্পেও সদস্য-সদস্যাদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। এমনিভাবে আমাদেও প্লট প্রকল্পগুলিতেও এলোটিগণ বিনিয়োগ করে চলেছেন এবং তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের এই দেড় বছরে মোট--- বিঘা জমি ক্রয় করেছি যা সদস্য-সদস্যাদের মাঝে বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রীয়াধীন আছে।
সোসাইটির নানা প্রোডাক্ট যাতে সদস্য-সদস্যাগণ আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেন সেজন্যে আমরা বিগত দু বছর যাবৎ সেবাকাল ঘোষণা করে সদস্য-সদস্যাদের নানাবিধ সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছি। আর এর ফলে আমাদের সোসাইটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সোসাইটিকে নিরাপদ রাখার জন্যে আমরা ইতোমধ্যেই একাধিক নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দিয়েছি যারা সার্বক্ষণিক সোসাইটির নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। এবং অফিসের কাজ তদারকী এবং সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্যে আমরা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করেছি। ফলে আমাদের সোসাইটির সদস্য-সদস্যাগণ সবদিক থেকেই অধিক নিরাপত্তা লাভ করছেন।
সোসাইটির কর্মকর্তাগণ সর্বদাই সোসাইটির উন্নয়নের জন্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাই প্রতিনিয়তই আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য-সদস্যাগণ সোসাইটির বিভিন্ন প্রকল্প সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছেন। আমাদের কর্মকর্তাদের মাঝে সমন্বয় রয়েছে দৃঢ়। তাই আমরা সোসাইটির সদস্য-সদস্যাদের কল্যাণে অধিক কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি।
আমরা আমাদের সদস্য-সদস্যাদের সর্বাধিক সেবা দেবার জন্যে সর্বদা সচেষ্ট। তাই প্রায় প্রতিটি সদস্য এলাকায়ই আমরা সেবা বুথ চালু করেছি। ফলে সদস্য-সদস্যাগণ তাদের এলাকায় বসেই সোসাইটির বিভিন্ন সেবা পেতে পারছেন এবং তারা সোসাইটির এই কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সেবা বুথ থেকে সোসাইটির সকল প্রকার ফরম, ঋণের টাকা উত্তোলন ও সঞ্চয়ী টাকা উত্তোলনের সুবিধা সম্মানীত সদস্য-সদস্যাগণ পাচ্ছেন।
সোসাইটির ওয়েব সাইট একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যম। তাই বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ওয়েব সাইটকে সম্পূর্ণ আপ-ডেট করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এমর্মে একটি কমিটি অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা বিদেশে থাকেন তারা যেন সোসাইটির সেবা পেতে পারেন সেজন্যে তাদের কাছে সোসাইটির সর্বশেষ সুযোগ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার জন্যে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
সবশেষে বলতে চাই সোসাইটির বিরোধিতা করার জন্যেই কেবল বিরোধিতা করা এমন মানসিকতা নিয়ে একটি মহল সর্বদাই অপপ্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের দুষ্ট কথায় কান না দিয়ে সোসাইটির অফিসে এসে বাস্তব অবস্থা অবগত হবার জন্যে আমি সম্মানীত সদস্য-সদস্যাদের আহবান জানাচ্ছি। সকলে ভালো থাকুন। সোসাইটির কাজে সহায়তা করুন এবং কালোকে কালো বলুন এই কামনা করি।
আগষ্টিন পিউরীফিকেশন
চেয়ারম্যান
|