আগষ্টিন পিউরীফিকেশন
চেয়ারম্যান
দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ
সম্মানিত সদস্য-সদস্যা ও শুভাকাঙ্খীবৃন্দ,
প্রথমেই আমার পক্ষ থেকে সমবায়ী প্রীতি ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আমি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি ‘দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ২৭ জন নিবেদিতপ্রাণ স্বপ্নদ্রষ্টা সদস্যদের। যাদের কল্যাণে ১৯৭৭ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের দিনে এই সোসাইটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের স্বপ্ন ছিল রাজধানী ঢাকা শহরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের খ্রিস্টভক্তদের স্থায়ীভাবে বসবাসের প্রয়োজনীয় আবাসনের ব্যবস্থা করা। তাদের সেই স্বপ্ন আজ অনেকাংশেই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্য দিয়ে আমি আমার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিষদ নিয়ে বাস্তবায়নে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
আপনারা জানেন, সম্মানিত সদস্য-সদস্যাদের প্রত্যক্ষভোটে ২০১২ খ্রীষ্টাব্দে নির্বাচিত হয়ে আমি ও আমার পরিষদ দায়িত্ব গ্রহণ করি। তখন সোসাইটি ছিল নানা জটিল সমস্যায় জর্জরিত। একদিকে সোসাইটির তহবিল ছিল শূণ্যের কোঠায় অপরদিকে নানা অনিয়ম ও সীমাহীন দূর্ণীতি ও লুটপাটে সোসাইটিকে পরিণত করেছিল একটি নিমজ্জিত নৌকায়। আমরা দায়িত্বভার গ্রহণের পরেই এই অচলাবস্থা থেকে সোসাইটিকে সুগঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম। ফলে, একদিকে যেমন দূর্ণীতি ও অর্থ আত্মসাতের মূল উৎপাটনে সাহসিকতার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তেমনি সোসাইটির অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সুদৃঢ় করার জন্যে নানা কৌশল অবলম্বন করি। ফলে, ২০১৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যেই আমরা সকল প্রতিকূলতা জয় করে সোসাইটিকে সুশৃংখল ও সুগঠিত করতে সক্ষম হই। এই কাজগুলো ত্বরান্বিত করতে আপনারাও আমাদের পাশে সহাবস্থানের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন। ফলশ্রুতিতে, ২০১৫ খ্রীষ্টাব্দের নির্বাচন এবং ২০১৮ খ্রীষ্টাব্দের নির্বাচনে পর পর দু’বার আমাকে ও আমার পরিষদকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান রেখে আমরাও সোসাইটিকে সুগঠিত করে নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে বর্তমানে সোসাইটির সার্বিক উন্নয়নে প্রভূত সাফল্য লাভ করেছি। আমি এ জন্যে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
সম্মানিত সদস্যবৃন্দ, আপনাদের আরও অবগত করাতে চাই, আমাদের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি দায়িত্বভার গ্রহণের পর এই পর্যায়ে আসা পর্যন্ত যতটুকু সফলতা লাভ করেছি তা সবটুকু আপনাদের সকলের সম্মিলিত সহযোগিতার অনন্য অবদানের ফল। ২০১২ খ্রীষ্টাব্দে আমাদের দায়িত্বভার গ্রহণের সময়ে সোসাইটির সম্পদ পরি-সম্পদের পরিমান ছিল ২২২ কোটি টাকা এবং দায় ছিল ১৫ কোটি টাকা। যা বর্তমানে আমাদের সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও দক্ষ নেতৃত্বের সুবাদে মাত্র নয় বছরে পরিসম্পদের পরিমাণ ২০০০ কোটি টাকার উপরে উপনীত করতে সক্ষম হয়েছি। পাশাপাশি সোসাইটির ফ্ল্যাট প্রকল্পের সংখ্যা ১২টি থেকে ১২৯টি প্রকল্পে উন্নীত করেছি। ২০১২ খ্রীস্টাব্দে জমির পরিমাণ ছিল ২৭৭.৪৮ বিঘা যা বর্তমানে প্রায় ৯০০ বিঘার উপরে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা জেনে খুশি হবে, দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিকের মর্যাদালাভের জন্যে আমাদের খ্রিষ্টান সমাজের খ্রিষ্টভক্তদের আধুনিক সকল সুবিধা প্রদান করে বসবাসের উপযোগী করে তোলার লক্ষে রাজধানীর উত্তরায় ৩য় প্রকল্পে ও পূর্বাচলে ৪০টি প্লট ক্রয় করেছি। এর ফলে বর্তমান বোর্ডের দূরদর্শিতা ও আন্তরিকতায় খ্রিষ্টান সমাজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
আপনাদের আনন্দের সঙ্গে আরও জানাতে চাই, সোসাইটির বৃহৎ কর্মযজ্ঞে বর্তমান বোর্ডের আরও একটি মাইলফলক সোসাইটির প্রধান স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা। প্রধান কার্যালয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রয়াত পরম শ্রদ্ধেয় আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও’র নামে ‘আর্চবিশপ মাইকেল ভবন’ অভিহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সদস্যদের দোড়গোড়ায় সেবা প্রদানের লক্ষে স্থায়ী সেবাবুথ স্থাপন ও বিভিন্ন এলাকায় সেবাবুথ চালু করা। সদস্যগণ সেবাবুথসমূহ থেকেও সোসাইটির সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারছেন। সদস্যদের হিসাবের আধুনিকায়নে যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল সার্ভিস। প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে সেবাবুথ সমূহকে যুক্ত করা হয়েছে ডিজিটালাইজেশনে ও সিসিটিভির আওতাধীন। নিরাপত্তায় যুক্ত রয়েছে নিজস্ব কর্মী ছাড়াও কোম্পানী নিরাপত্তা বাহিনী। প্লট প্রকল্পগুলোতে নির্মাণ করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর ও ফ্ল্যাট প্রকল্পগুলোতে রয়েছে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী। এ সকল কাজে সোসাইটির সদস্য-সদস্যাগণ, এলোটিগণ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বর্তমানে সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ এর কারণে মানুষের জীবনযাপনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন এমনকি অনেক খ্রিষ্টভক্তও মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা তাদের শোকার্তচিত্তে স্মরণ করি এবং যারা এখনও করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থাবস্থায় রয়েছেন তাদের সুস্থতা কামনা করি। করোনার এই দুর্যোগকালীন সময়ে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সদস্য-সদস্যাদের সেবা প্রদান করতে। সোসাইটির পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার হাত প্রসারিত করেছি। আশার কথা. বিজ্ঞানীদের টিকা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে করোনার মহামারি থেকে বিশ্ব আজ করোনামুক্ত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের সম্পন্নকৃত ও চলমান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে :
এমসিসিএইচএসএল রিসোর্ট-০১ কাম ট্রেনিং সেন্টার-পুবাইল, শান্তির নীড় মঠবাড়ী প্রকল্প-০৪, এমসিসিএইচএসএল হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট-কাম থিম পার্ক (দড়িপাড়া), পাগাড় ফ্ল্যাট প্রকল্প-০৩ (বাণিজ্যিক-কাম-আবাসিক ভবন), হাসনাবাদ ফ্ল্যাট প্রকল্প-০১ (নীড়-২০,বাণিজ্যিক-কাম-আবাসিক ভবন-২), গোল্লা ফ্ল্যাট প্রকল্প এমসিসিএইচএসএল টাওয়ার-৩ (নীড়-৮৫), রিসোর্ট-কাম-শিশু পার্ক প্রকল্প (বিন্দান), এমসিসিএইচএসএল এলপিজি ফিলিং স্টেশন, এমসিসিএইচএসএল মা ও শিশু হাসপাতাল ( ইউনিট-০১ মনিপুরীপাড়া, ফার্মগেইট; ইউনিট-০২ রাজাসন পলুর মার্কেট), ধোপাপাড়া অটো ব্রিকস প্রকল্প বিন্দান, বিবিধ ভাড়া প্রকল্প ইত্যাদি।
সোসাইটিতে দায়িত্বকালীন সময়ে কর্মকাণ্ডের সফল বাস্তবায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সোসাইটি ও সোসাটির চেয়ারম্যান হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। যেমন :
চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যক্তি পর্যায়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন :
জাতীয় শ্রেষ্ঠ সমবায়ী স্বর্ণপদক পুরস্কার অর্জন (২০১৫), নেপাল-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পুরস্কার (২০১৯), রবীন্দ্র-নজরুল সম্মাননা (২০২০), গান্ধী পীচ্ সম্মাননা (২০২০) STAR OF THE YEAR-2020, সমাজরত্ন সম্মাননা (২০২১) লাভ। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে উল্লেখযোগ্য পুরস্কার অর্জন করা করা হয়েছে যা ব্যক্তিগত সুনাম অর্জনের সঙ্গে সোসাইটির সুনামও বৃদ্ধি লাভ করেছে বলে মনে করি।
সোসাইটির স্বর্ণপদক অর্জন :
আমাদের দায়িত্বভার গ্রহণের পর সোসাইটিতে উন্নয়নের ছোঁয়ায় সোসাইটি জাতীয় শ্রেষ্ঠ সমবায় পুরস্কার-২০১৯ স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ৭ নভেম্বর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২০ এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন এবং সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে উক্ত স্বর্ণপদক গ্রহণ করি।
আপনারা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন যে, সমবায়ের ২১/১ বিধির কারণে সোসাইটির সকল সদস্য-সদস্যাদের নিয়ে বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচনের যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা নিরসন হয়েছে। আমি আরও উল্লেখ করতে চাই যে, সদস্য-সদস্যাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোসাইটির ৩২তম বার্ষিক সাধারণ সভায় আমার স্বাগত বক্তব্যে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব স্বপন ভট্টাচার্য, এমপি; বিশেষ অতিথি গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি’র উপস্থিতিতে ২১/১ বিধি বাতিলের দাবী জানিয়েছিলাম। এ বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতির মর্মে বিগত ১লা ডিসেম্বর ২০২০ খ্রীষ্টাব্দে ২১/১ বিধি সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ জন্যে আমি সকলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
সোসাইটির ওয়েব সাইট একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যম। তাই বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ওয়েব সাইটকে সম্পূর্ণ আপ-ডেট করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কাজটি ত্বরান্বিত করতে একটি কমিটি অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা বিদেশে থাকেন তারা যেন সোসাইটির সেবা পেতে পারেন সে জন্যে তাদের কাছে সোসাইটির সর্বশেষ সুযোগ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরার জন্যে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পরিশেষে বলতে চাই, সোসাইটির বর্তমান স্বচিত্র উন্নয়ন অবলোকন করুন। সোসাইটির বিরোধিতা করার জন্যেই কেবল বিরোধিতা করা এমন মানসিকতা নিয়ে একটি মহল সর্বদাই অপপ্রচারে ব্যস্ত থাকেন। তাদের দুষ্ট কথায় কান না দিয়ে সোসাইটির কার্যালয়ে এসে বাস্তব অবস্থা অবগত হবার জন্যে আমি সম্মানিত সদস্য-সদস্যাদের আহবান জানাচ্ছি। সকলে ভালো থাকুন। সোসাইটির কাজে সহায়তা করুন এবং কালোকে কালো বলুন এই কামনা করি।
আগষ্টিন পিউরীফিকেশন
চেয়ারম্যান
দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ