দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ-এর ইতিহাস (সংক্ষেপন)
- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী : ১৪ এপ্রিল, ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ
- রেজিষ্ট্রেশন: ৬ জুন, ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ
- প্রথম ঠিকানা: হলি রোজারী চার্চ, তেজগাঁও, ঢাকা
- প্রাথমিক সদস্য সংখ্যা: ২৭ জন
- প্রাথমিক ভর্তি ফি : ৫০ টাকা
- প্রাথমিক প্রতিটি শেয়ার : ১০০ টাকা
- প্রথম প্রকল্প: রাজাবাজার প্রকল্প
- প্রথম পৃষ্ঠপোষক: স্বর্গীয় আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও ডি.ডি.
- প্রথম গৃহ নির্মাণকারী এলোটি: মি. লিও মধু (মহাখালী ১ নং প্রকল্প)
- প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা: ২৯ জুন ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ
- ৯নং চার্চ কমিউনিটি সেন্টার ঠিকানায় স্থানান্তর: এপ্রিল ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ
- বর্তমান স্থায়ী প্রধান কার্যালয় ঠিকানায় স্থানান্তর : ১১৬/১ মনিপুরিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫, বাংলাদেশ
মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে বাসস্থান অন্যতম। বাসস্থানের এই মৌলিক চাহিদা পূরণে অনেকেই গ্রামাঞ্চলে বসবাসের পাশাপাশি শহরে একটি ফ্ল্যাট বা এক খণ্ড ভূমিতে বাড়ি গড়া একজন মানুষের হৃদয়ের আকাঙ্খাময় একটি স্বপ্ন। পারিবারিক আর্থ সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নত জীবনযাপনের প্রত্যাশায় অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসেন এবং একটা ছোট্ট সুন্দর সুখের নীড় গড়ার স্বপ্ন দেখেন। আমাদের খ্রীষ্টান সমাজের খ্রীষ্টভক্তদের মধ্যে অনেকেরই চিন্তা-চেতনায় ও মননেও এই স্বপ্নটা ছিল গভীর। খ্রীষ্টভক্তদের স্বপ্নের এই গভীরতা উপলব্ধি করার সফল বাস্তবায়নই আজকেই এই ‘দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’ প্রতিষ্ঠান। স্বপ্নদ্রষ্টাদের দূরদর্শি স্বপ্নের ও কষ্টার্জিত চিন্তার ফসলই আজকের এই হাউজিং সোসাইটি।
বৃটিশদের এই উপমহাদেশে শাসনের অবসানের পরপরই পাকিস্তান আমলে ঢাকা শহরে খ্রীষ্টান সমাজের খ্রীষ্টভক্তদের বসবাসের প্রয়োজনের তাগিদে ‘হাউজিং সোসাইটি’ নামক একটি প্রাথমিক ধারণা লাভ করে স্বর্গীয় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং এর কাছ থেকেই। বিভিন্ন সূত্র থেকে বিস্তারিত জানা যায়, বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী কলেজ নটরডেম কলেজ এর যাত্রা শুরু হয়েছিল লক্ষ্মীবাজারে। পরবর্তীতে কলেজ ক্যাম্পাসটি বড় করার প্রয়োজনে তা স্থানান্তর করে বর্তমান মতিঝিল এলাকায় নিয়ে আসা হয়। ফলে লক্ষ্মীবাজারের কলেজ ভবনটি খালি হয়ে যায়। তৎকালীন হলিক্রশ ফাদারগণ ঐ ক্যাম্পাসটি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আর এই সুযোগে স্বর্গীয় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং একটি হাউজিং প্রকল্পের মাধ্যমে ঐ ক্যাম্পাসটি ক্রয়ের জন্যে স্থানীয় খ্রীষ্টান নেতৃবৃন্দকে উৎসাহিত করেন। উল্লেখ্য যে, কলেজ ক্যাম্পাসটিতে মোট তিনটি ভবন ছিল। ফাদারের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে স্বর্গীয় জোনাস রোজারিও একটি ভবন ক্রয় করেন। কিন্তু বাকী দুটো ভবন ক্রয়ের কোন খ্রীষ্টান লোক না পাওয়াতে সমবেতভাবে একটি হাউজিং সোসাইটি গঠনের পরিকল্পনা করেন তৎকালীন পবিত্র ক্রুশ সম্প্রদায়ের ফাদারগণ। ফলে স্বর্গীয় জোনাস রোজারিও এবং ফাদারদের প্রচেষ্টায় ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের প্রথম হাউজিং সোসাইটি গঠিত হয় যার নাম ছিল Harington Housing Society. এই হাউজিং সোসাইটি ৮/৯টি পরিবারকে কিস্তিতে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দেয়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের পর এই সোসাইটির কার্যক্রম তেমনটি আর টিকে থাকেনি।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকা শহরের উপরে অভিবাসীদের চাপ ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি এবং বাড়ি ভাড়া পাওয়াও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এ সময়ে অনেকেই জীবন ও জীবিকার তাগিদে যারা এর আগে ভারতের কোলকাতায় অবস্থান করছিলেন তারা ঢাকায় ফিরে আসেন। ফলে অনেক খ্রীষ্টান পরিবারই আবাসন সমস্যায় পতিত হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে খ্রীষ্টান সমাজের কয়েকজন স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা প্রচেষ্টা চালান যাতে একটি হাউজিং সোসাইটি গঠন করা যেতে পারে। যেহেতু, দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন আগেই যাত্রা শুরু করেছিল তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করেই সমবায়ী প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি হাউজিং সোসাইটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মণ্ডলীর পক্ষ থেকে হাউজিং সোসাইটি গঠনে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে যিনি পাশে এসে দাঁড়ান তিনি হলেন তৎকালীন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় আর্চবিশপ মাইকেল রোজারিও, ডিডি। ব্যক্তি পর্যায়ে এই পথের পথিকৃৎ হলেন প্রয়াত ডানিয়েল কোড়াইয়া। তার সাথে ছিলেন প্রয়াত আলেকজান্ডার রোজারিও সহ আরও কয়েকজন সমবায়ী ব্যক্তিত্ব। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল স্বপ্নদ্রষ্টাদের স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের ফসল হিসেবেই জন্ম লাভ করে ‘দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো–অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ’। হাউজিং সোসাইটি গঠনের প্রথম সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৩৪, পূর্ব তেজতুরীবাজার, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫–প্রয়াত ডানিয়েল কোড়াইয়ার বাস ভবনে। ঐ সভাতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল হাউজিং সোসাইটির কার্যালয়ের ঠিকানা হবে হলি রোজারি চার্চ, তেজগাঁও, ঢাকা। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন ২৭ জন নিবেদিনপ্রাণ স্বপ্নদ্রষ্টা। যারা ছিলেন-মি: ডানিয়েল কোড়াইয়া, মি: আলেকজাণ্ডার রোজারিও, মি: পিটার হালদার, মি: ইগ্নেসিয়াস পিউরীফিকেশন, মি: খ্রীষ্টফার গোমেজ, মি: জন গমেজ, মি: জর্জ সুব্রত পালমা, মি: জন এফ রড্রিক্স, মি: সুভাস সেলেষ্টিন রোজারিও, মি: আরনল্ড সি. গোমেজ, মি: গাব্রিয়েল রিবেরু, মি: গাব্রিয়েল মানিক গোমেজ, মি: প্যাট্রিক গমেজ, মিসেস মল্লিকা কোড়াইয়া, মিসেস পারুল ডরোথি গমেজ, মি: জন গমেজ (সওদাগর), মি: সিরিল রোজারিও, মি: পিটার পল গমেজ, মি: সুনীল বেঞ্জামিন গমেজ, সুনীলা স্কলাস্টিকা কস্তা, মি: পিটার এম. কস্তা, মি: এন্থনী কোড়াইয়া, মি: এণ্ড্রু ডি’কস্তা, মি: রবিন রোজারিও, মি: যোসেফ মধু, মি: সিলভেস্টার রিবেরু ও মি: বিজয় জেমস রোজারিও। উপস্থিত ২৭ জনের মধ্য হতে ঐদিনই ৯জনকে মনোনীত করে একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়। যাদের মধ্যে ছিলেন, মি: ডানিয়েল কোড়াইয়া-চেয়ারম্যান, মি: আলেকজাণ্ডার রোজারিও-ভাইস চেয়ারম্যান, মি: পিটার হালদার-সেক্রেটারি, মি: ইগ্নেসিয়াস পিউরীফিকেশন-ট্রেজারার, সদস্য হিসেবে ছিলেন- মি: জন এফ. রড্রিক্স, মি: আরনল্ড সি. গোমেজ, মি: গাব্রিয়েল মানিক গোমেজ, মি: সুভাস সি. রোজারিও ও মি: খ্রীষ্টফার গমেজ প্রমুখ।
উক্ত সভাতে নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয় :
- ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন। এর আহবায়ক ছিলেন মি. ডানিয়েল কোড়াইয়া ও সদস্য সচিব মি. পিটার হালদার।
- সোসাইটির নামকরণ করা হয় “দি মেট্রোপলিটান খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিঃ”
- ঠিকানা হলি রোজারি চার্চ, তেজগাঁও, ঢাকা।
- তিন সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠন। ১. ফাদার উর্বাণ কোড়াইয়া ২. ব্রাদার কনরার্ড রজার ও ৩. এডভোকেট লাফন্ড গমেজ।
- হাউজিং সোসাইটির শেয়ার মূল্য ধরা হয় ১০০ টাকা এবং ভর্তি ফি বাবদ ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
- এই সভাতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, সোসাইটি জমি ক্রয় করে তা প্লট আকারে সদস্য-সদস্যাদের মাঝে বরাদ্দ দিবে।
- সোসাইটির জন্যে একটি উপবিধি প্রণয়ণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।